হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে আলোচনা - পর্ব-০৭ - জমজম কূপের ইতিহাস
আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আজকে জমজম কূপের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো ইনশায়াল্লাহ। জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো? জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য, জমজমের পানি পান করার ফজিলত হলো আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।
আজকের পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন জমজম কূপ কিভাবে তৈরি হলো? জমজম কূপের পানির উৎস, জমজম কূপের পানির উপকারিতা, জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া, জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম, জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস ও আরো অনেক তথ্য জানতে পারবেন। তাই এই সকল বিষয় গুলো যদি আপনি জানতে চান, তাহলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
পেইজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনী নিয়ে আলোচনা - পর্ব-০৭ - জমজম কূপের ইতিহাস
- জমজম কূপের ইতিহাস
- জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো
- জমজম কূপের ছবি
- যে কারণে জমজম কূপের নাম ‘জমজম’ রাখা হয়েছিল
- আবে জমজম অর্থ কি
- জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য
- জমজম কূপের গভীরতা
- জমজমের পানি খাওয়ার ফজিলত - জমজম কূপের পানির উপকারিতা
- জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস
- জমজমের পানি পান করার নিয়ম
- জমজমের পানি পান করার দোয়া
- জাহেলি যুগে যেভাবে জমজম কূপ খনন করা হয়
- শেষ কথা
জমজম কূপের ইতিহাস
জমজম কূপ হলো মক্কার মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে একটি বিশেষ কূপ। জমজম কূপের পানি পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম। কাবা ঘরের ফজিলত এর সাথে জমজম কূপের মাহাত্ম অতপ্রোতভাবে জড়িত।
কাবাঘর ও জমজম কূপ একটির সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণভাবে জড়িত। জমজম কূপের ইতিহাস হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ইতিহসের সঙ্গে বর্ণিত রয়েছে। তাই এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ে জমজম কূপের ইতিহাস সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নিন।
জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো
জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো? বা জমজম কূপ কিভাবে তৈরি হলো? তা আমাদের সকলকেই জানতে হবে। কেননা মুসলিম হিসেবে এটা জানা আমাদের কর্তব্য। জমজম কূপের উৎপত্তি নিয়ে ইসলামের ইতিহাসে বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও শিশু সন্তান ইসমাইলকে মক্কার মরুভূমিতে রেখে আসেন।
এরপর তাদের সাথে থাকা সমস্ত খাবার ও পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা পানির সন্ধান করার জন্য পার্শ্ববর্তী পাহাড়দ্বয় সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাতবার ছুটাছুটি করেছিলেন। হাজেরা এতো চেষ্টা করেও যখন কোন পানির সন্ধান পেলেন না, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। তখন মহান আল্লাহ তায়ালা মা হাজেরার প্রার্থনা কবুল করলেন।
এই সময় শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর পায়ের আঘাতে ভূমি থেকে পানি বের হয়ে আসে। হাজেরা ফিরে এসে দেখেন ইসমাইলের পায়ের পাশ থেকে পানি বের হচ্ছে। এরপর হাজেরা পাথর দিয়ে সেই পানির ধারায় আবদ্ধ করলে কূপের সৃষ্টি হয়।
জমজম কূপ কিভাবে তৈরি হলো বা জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো তা নিয়ে আমার আরেকটি আর্টিকেল আছে, সেই আর্টিকেলটি পড়তে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন। তাই জমজমের পানি কোথায় পাওয়া যায়? আশা করি, বুঝতে পেরেছেন।
জমজম কূপের ছবি
জমজম কূপের ছবি টি দেখে নিন। সৌদি আরবে জমজম কূপের উপর একটি গবেষনা কেন্দ্র রয়েছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০.৬ ফুট নিচে থেকে জমজম কূপের পানি পাওয়া যায়। সেখান থেকে ভারি মোটরের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৮ হাজার লিঃ হারে ২৪ ঘন্টা পানি উত্তোলন করা হয়। তখন পানির স্তর ৪৪ ফুট নিচে নেমে যায়।
কিন্তু যখন পানি উত্তোলন বন্ধ করা হয়, তখন মাত্র ১১ মিনিটেই পানির স্তর ১৩ ফুট উচ্চতায় ফিরে আসে। এই পবিত্র জমজম কূপের ছবিটি দেখে নিন।
যে কারণে জমজম কূপের নাম ‘জমজম’ রাখা হয়েছিল
আল্লাহর নির্দেশে যখন শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর পায়ের পাশে একটি পানির ফোয়ারা জেগে উঠেছে, তখন ক্রমশ তা উথলে উঠে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এটা দেখে মা হাজেরা খুব আনন্দিত হলেন। আর এর চারদিকে বাঁধ দিয়ে পানি থামানোর জন্য চেষ্টা করছেন।
এই সময় পানিকে থামানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে মা হাজেরা উচ্চস্বরে বলছিলেন ‘জমজম’। জমজম অর্থ থেমে যাও। আর মা হাজেরার সেই উচ্চারিত শব্দ থেকেই বিশ্বের সব চাইতে পবিত্র এ কূপের নাম করণ হয়ে যায় ‘জমজম’।
আবে জমজম অর্থ কি
আবে জমজম অর্থ কি? জমজম কোন ভাষার শব্দ তা জেনে নিন এখন। আব হচ্ছে ফারসি শব্দ, আর জমজম হচ্ছে আরবি শব্দ। আবে জমজম অর্থ হচ্ছে মক্কার পবিত্র জমজম কূপের পানি।
জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য
জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনায়। তাই জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য সম্বন্ধে জানতে চাইলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। তাই আসুন এবার জেনে নেওয়া যাক জমজম কূপের গভীরতা কত, জমজম পনির উৎস কোথায় ও জমজম কূপ সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক রহস্যঃ
- মহান আল্লাহ তায়ালা অসীম কুদরতে ৪০০০ (চার হাজার) বছর পূর্বে এই জমজম কূপ সৃষ্টি হয়েছিল।
- যদি দুটি ভারী মোটরের সাহাযে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ (আট হাজার) লিটার পানি উত্তোলন করা হয়, তবুও এর পানি একটুও কমে না, সৃষ্টির সূচনাকালের ন্যায়ই থাকে।
- জমজম কূপের পানির স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয়নি। আর এখানে কখনো কোন ছত্রাক বা শৈবাল জন্মায়নি।
- জমজম কূপ কোন নদী বা জলাশয়ের সাথে সংযুক্ত নয়।
- জমজম কূপ থেকে যদি সারাদিন পানি উত্তোলন করা হয়, তাহলে মাত্র ১১ মিনিটেই আবার এটি পূর্ণ হয়ে যায়।
- জমজম কূপের পানি কখনো শুকায়নি। এর পানির প্রবাহ প্রথম থেকে আজ অবদি একই রয়েছে। এমনকি হজ্জ্ব মৌসুমের সময় যখন পানি ব্যবহারের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়, তখনো এই পানির স্তর নিচে নামে না।
- জমজম কূপ সৃষ্টির পর এর পানির যে গুণাগুন, স্বাদ ও বিভিন্ন উপাদান ছিল, আজও সেই একই রকম আছে।
- জমজম কূপের পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ বেশি থাকায় এটি পিপাসার সাথে ক্ষুধাও নিবারণ করে।
- জমজম পানিতে ফ্লুরাইড এর পরিমাণ বেশি থাকায় এতে কোন জীবানু জন্মায় না।
- জমজম কূপের পানি পান করলে যাবতীয় ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
জমজম কূপের গভীরতা
জমজম কূপের গভীরতা কত তা অনেকেই জানতে চান। জমজম কূপটি পবিত্র মসজিদে হারামের ভেতরেই অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট এবং প্রস্থ বা চওড়া ১৪ ফুট। এর ভেতরের গভীরতা ৩০ মিটার বা ৯৮ ফুট। মতান্তরে এর গভীরতা ১২০ বা ১৪০ ফুট।
জমজমের পানি পান করার ফজিলত - জমজম কূপের পানির উপকারিতা
জমজমের পানি পান করার ফজিলত কি? জমজমের পানি খাওয়ার ফজিলত, জমজম কূপের পানির উপকারিতা ও জমজম পানি কতদিন রাখা যায় তা অনেকেরই অজানা। কিন্তু এই সকল বিষয় গুলো আমাদের সবারই জানতে হবে। তাই এই সকল বিষয় গুলো এই পোস্টে আলোচনা করা হচ্ছে।
“জমজম” আল্লাহ তায়ালার দেয়া এক অনন্য নিদর্শন ও রহমত। জমজম হলো ভূ-পৃষ্ঠের সেরা পানি। হযরত ইসমাইল (আঃ) এর পায়ের আঘাত থেকে সৃষ্ট জমজম কূয়ার পানি সকল মুসলিম উম্মাহর হৃদয় শীতল হয়।
প্রিয় পাঠক, হজ্জ্ব ও ওমরা’র ফজিলত ও বরকতময় যে সব কাজ আছে, তার মধ্যে একটি হলো জমজমের পবিত্র পানি পান করা। এই পানি পান করার মধ্যে রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও বরকত। জমজমের পানির যে গুণাগুণ ও উপকারিতা রয়েছে, সে বিষয়টি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও প্রমাণিত। নিম্নে এই পানি পান করার ফজিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
জমমের পানির উপকারিতা সম্পর্কে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, “আমি রাসূল (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, জমজমের পানি যে উপকার পাওয়ার আশায় পান করা হবে, তা অর্জিত হবে বা সে উপকার পাওয়া যাবে।” (ইবনে মাজাহ)
সাধারণ পানির তুলনায় জমজমের পানিতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কিছুটা বেশি। জমজম পানির রাসায়নিক গঠন অ্যালকালাইন প্রকৃতির। এটি শরীরের অতিরিক্ত এসিডের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে।
জমজমের পবিত্র পানি নিয়ে জাপানের বিখ্যাত গবেষক মাসারু এমোতো গবেষণা করে বলেছেন, জমজমের এক ফোটা পানি যদি সাধারণ পানির ১ হাজার ফোটা পানিতে মেশানো হয়, তাহলে সমস্ত পানি জমজমের পানির বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে।
আবার, শুধু জাপানই নয়, জার্মানির বিজ্ঞানী নাট ফিফারও জমজমের পানি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, জমজমের পানি আশ্চর্য জনক ভাবে দেহের সেল সিস্টেমের শক্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
জমজমের পানি পান করার ফজিলত, জমজমের পানি খাওয়ার ফজিলত ও জমজমের পানি খাওযার উপকারিতা নিয়ে জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস কি বলে তা নিয়ে নিচে বিস্তারিত থাকছে।
জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস
জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস যে সব তথ্য দেয়, সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু তথ্য আমি এখানে তুলে ধরছি। জমজমের পানিতে রয়েয়ে অনেক উপকারিতা। তাই জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস কি বলে তা জেনে নিন এই পোস্টটি পড়ে। জমজমের পানি সম্পর্কে কিছু হাদিস তুলে ধরা হলোঃ
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া একটি বরকতময় নেয়ামত হলো জমজমের পবিত্র পানি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং হজ্জ্ব ও ওমরায় অংশগ্রহণকারীদেরকে জমজমের পানি পান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী জমজমের পানি পান করা ঈমানের বহিঃপ্রকাশ।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “জমিনের বুকে জমজমের পানি সর্বোত্তম পানি।” (তাবরানি ফিল কাবিরঃ ১১১৬৭, সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিবঃ ১১৬১)
জমজমের পানির বরকত ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদিসে আছে, আবু জর গিফারি (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয় তা বরকতময়, স্বাদ অন্বেষণকারীর খাদ্য।” (মুসলিম, হাদিসঃ২৪৭৩)
রোগের শিফা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই তা সুখাদ্য খাবার এবং রোগের শিফা।” (মুসলিম, হাদিসঃ২৪৭৩)
হজ্জ্ব ও ওমরা আদায়কারীর জন্য বিশেষভাবে এবং এবং পৃথিবীর সকল মুসলমনদের জন্য জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিসঃ ১৫৫৬)
জমজমের পানির বরকতময় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরেক হাদিসে আছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয়, তা সাধিত হবে।” ( (ইবন মাজাহ, হাঃ ৩০৬২)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “তিনি জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন, রাসূল (সাঃ)ও তা বহন করতেন।” (তিরমিজি, হাঃ ৯৬৩)
জমজমের পানি পান করার নিয়ম
জমজমের পানি পান করার নিয়ম, জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম, জমজমের পানি কিভাবে খেতে হয়, জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয় - এই সকল বিষয় গুলো থাকছে আজকের এই আলোচনায়। তাই এই সকল বিষয় গুলো জানার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।
হজ্জ্ব, ওমরা ও জিয়ারতকারীরা পবিত্র কাবা শরীফ তওয়াফ করে মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তৃপ্তি সহকারে জমজমের পানি পান করা উত্তম।
জমজমের পানি পরিপূর্ণ তৃপ্তি সহকাকে পান করা হলো সুন্নত। জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে হাদিসে আছে- যেমন- কিবলামুখী হওয়া, দাঁড়িয়ে পান করা, বিসমিল্লাহ বলা, তিনবার শ্বাস নিয়ে পান করা, তৃপ্তি সহকারে পান করা, পানি পান শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা।
রাসূল (সাঃ) নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন, তা হাদিসে পাওয়া যায়। তাই জমজমের পানিকে দাঁড়িয়ে পান করাকে উত্তম মনে করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূল (সাঃ) জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করেছেন।” (সহিত মুসলিম, হাঃ ২০২৭)
জমজমের পানি পরিতৃপ্তি সহকারে পান করা নিয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আমাদের ও মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য এই যে, তারা তৃপ্তি সহকারে জমজমের পানি পান করে না।” (ইবনে মাজাহ)
জমজমের পানি পান করাকে ইবাদত মনে করে পান করা উচিত। আর জমজমের পানি পান করার সময় দোয়া করে পান করা উচিত। কারণ, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।”
জমজমের পানি পান করার দোয়া
জমজমের পানি পান করার দোয়া বা জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া রয়েছে, তা আমাদের সকলকেই জানতে হবে। তাই জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া আরবি ও জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া বাংলা উচ্চারণ যদি আপনি না জেনে থাকেন, তাহলে এই পোস্টটি পড়ে এখন জেনে নিন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জমজমের পানি দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে তিন নিঃশ্বাসে পান করা সুন্নত। জমজমের পানি বরকত ও উপকার পাওয়ার আশায় যখন জমজমের পানি পান করবে, তখন এ দোয়া পাঠ করা উত্তম-
জমজমের পানি পান করার দোয়া আরবিঃ اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
জমজমের পানি পান করার দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা ইলমান নাফিয়া, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াশিফা’আন মিন কুল্লি দায়িন।”
জমজমের পানি পান করার দোয়ার বাংলা অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্থ রিজিক, নেক আমল করার তৌফিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।”
তাই সকল মুমিন মসলমানের উচিত, জমজমের পানির সকল উপকারিতা পাওয়ার জন্য যথাযথ সম্মান ও দোয়া পাঠ করে পান করা। নিয়ত পূরণের জন্য তা স্মরণ করে আল্লাহ’র কাছে সাহায্য করে এ পানি পান করা।
তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহপাক রব্বিল আলামিন! আপনি মুসলিম উম্মাহকে জমজমের পানি পান করে সকল বরকত ও উপকারিতা পাওয়ার তৌফিক দান করুন। মুনাফিকের আচরণ থেকে সকলকে মুক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। হাদিসের উপর তা আমল করার তৌফিক দান করুন। (আমিন)
জাহেলি যুগে যেভাবে জমজম কূপ খনন করা হয়
পবিত্র এ জমজম কূপ। বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই কূপের সাথে। পবিত্র জমজম কূপের প্রকাশ ঘটেছিল প্রায় চার হাজার বছর আগে। মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে যখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) মক্কার মরুময় প্রান্তরে রেখে আসেন, তখন তাদের সাথে ছিল সামান কিছু খাবার ও পানীয়।
আর তাদের কাছ থেকে যখন এই খাবার ও পানীয় শেষ হয়ে যায়, তখন হাজেরা (আঃ) তাঁর শিশুপুত্র ইসমাইল (আঃ) এর জন্য পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাত বার দৌড়া-দৌড়ি করেন। কিন্তু পানির কোন সন্ধান পেলেন না। তাই তিনি তখন মারওয়া পাহাড় এর উপর থেকে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।
এরপর তিনি একটি শব্দ শুনতে পেয়ে নিচে নেমে আসেন এবং দেখেন তাঁর শিশু পুত্রের পায়ের আঘাতে আল্লাহর অশেষ রহমতে অবিরাম পানির ধারা বয়ে যাচ্ছে।
এরপর যখন জাহেলি যুগ শুরু হয়ে গেল, তখন খোজায়া গোত্র কর্তৃক ক্ষমতাচ্যু ও বিতাড়িত হয়ে বনু জুরহাম গোত্র মক্কা ছেড়ে চলে যান। যাওয়ার আগে তাঁরা তাদের সমস্ত তলোয়ার, লৌহবর্ম ও সোনার হরিণ জমজম কূপের মধ্যে ফেলে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়। এরপর অনেক গুলো বছর পেরিয়ে যায়।
এরপর প্রায় সাড়ে চারশ বছর পর ৫৭০ খ্রিঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব স্বপ্নযোগে অবগত হন যে, তাঁকে জমজম কূপ খননের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এবং স্বপ্নে তার স্থানও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
তারপর তিন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাঁর পুত্র হারেসকে সঙ্গে নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে খননকার্য আরম্ভ করে দেন। খননকার্য চলাকালে কূপ থেকে বনু জুরহুম গোত্র কর্তৃক নিক্ষেপ করা সেই সব তলোয়ার, লৌহবর্ম ও দুুইটি সোনার হরিণ উত্তোলন করা হয়।
আব্দুল মুত্তালিব তলোয়ার গুলো দ্বারা কাবা ঘরের দরজা ঢালাই করেন, সোনার দুইটি হরিণ দরজার সাথে সন্নিবেশিত করে রাখেন এবং হাজিদের জন্য পানি পান করানোর ব্যবস্থা করেন।
জমজম কূপ খনন কালে আরো একটি ঘটনার উদ্ভব হয়। যখন কূপটি প্রকাশিত হয়, তখন কুরাইশগণ আব্দুল মুত্তালিব এর সাথে বিবাদ আরম্ভ করে এবং দাবি করে যে, খননকার্যে তাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে দিতে হবে।
তখন আব্দুল মুত্তালিব বললেন, যেহেতু এই কূপ খননের জন্য তিনি স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়েছেন, সেহেতু এই কাজে অন্যকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু কুরাইশগণও তাদের দাবি ছাড়তে রাজি ছিল না।
এই ব্যাপারে মতামত গ্রহণের জন্য তারা বনু সা’দ গোত্রের এক মহিলা, যে ছিল ভবিষ্যদ্বক্তা-তার নিকট যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এই উদ্দেশ্যে মক্কা থেকে যাত্রা শুরু করে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইলে পর্ণ সাইট বন্ধ করার উপায়
কিন্তু পথিমধ্যে তারা এমন কতকগুলো নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে, যাতে তাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা জমজম কূপের খননকার্য আব্দুল মুত্তালিব এর জন্যই নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তাই তারা আর অগ্রসর না হয়ে মক্কায় ফিরে এলো।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতেই আব্দুল মুত্তালিব মানত করেছিলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যদি অনুগ্রহ করে তাকে দশটি পুত্র সন্তান দান করেন এবং সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়, তাহলে তিনি তার একটি সন্তানকে বাইতুল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিবেন। (ইবনে হিশাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪২-১৪৭)
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনার মূল বিষয় বস্তু ছিল জমজম কূপের ইতিহাস। তাই এই পোস্টটিতে জমজম কূপ কিভাবে সৃষ্টি হলো, জমজম কোন ভাষার শব্দ, জমজম কূপের বৈজ্ঞানিক রহস্য, জমজম কূপের পানির উৎস, জমজম কূপের পানির উপকারিতা, জমজমের পানি পান করার ফজিলত, জমজমের পানি খাওয়ার ফজিলত, জমজমের পানি কতদিন রাখা যায়।
জমজমের পানি খাওয়ার দোয়া, জমজমের পানি পান করার দোয়া, জমজমের পানি সম্পর্কে হাদিস, জমজমের পানি খাওয়ার নিয়ম, জমজমের পানি কিভাবে খেতে হয়, জমজমের পানি কি দাঁড়িয়ে খেতে হয়, জমজমের পানি কেন দাঁড়িয়ে খেতে হয়, জমজমের পানি কোথায় পাওয়া যায়, আবে জমজম অর্থ কি, জমজম কূপ কিভাবে তৈরি হলো।
আজকের এই আলোচনা থেকে উপরোক্ত সকল বিষয় আশা করি, আপনি ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছেন। আর এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে এই পোস্টটি শেয়ার করে অনলাইফ আইটি এর সাথেই থাকুন। কোন ভূলক্রটি যদি থেকে থাকে, দয়া করে জানাবেন। ধন্যবাদ। (শওকত রাশেল)
ওয়ানলাইফ আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url