দোয়ার গুরুত্ব কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন
আসসালামু আলাইকুম! আজকের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হলো দোয়ার গুরুত্ব কি? গুরুত্বপূর্ণ দোয়া সমূহ, কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া, শ্রেষ্ঠ দোয়া সমূহ, হাদিসে বর্ণিত দোয়া সমূহ, মোনাজাতের দোয়া আরবিতে, মোনাজাতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ, গুনাহ মাফের দোয়া, বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া।
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনাটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন ছোট দোয়া সমূহ, মোনাজতের দোয়া সমূহ pdf, মোনাজতের দোয়া বাংলা, শ্রেষ্ঠ মোনাজাতের দোয়া, আল্লাহুম্মা দিয়ে মোনাজাত, রাসূল (সাঃ) এর দোয়া সমূহ pdf, ঋণ মুক্তির দোয়া, important dua in bangla এবং আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন। তাই এই সকল বিষয় গুলো জানতে হলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।
আরো পড়ুনঃ শবে বরাত কবে? শবে বরাত কি বিদআত?
পেইজ কন্টেন্ট সূচিপত্রঃ দোয়ার গুরুত্ব কি? কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া
দোয়া এর অর্থ কি?
দোয়া কি? দোয়া বলতে কি বোঝায়? দোয়া এর অর্থ কি? দোয়া শব্দের বাংলা অর্থ হলো মহান আল্লাহকে স্মরণ করা, তাঁকে ডাকা। তাঁর নিকট প্রার্থনা করা, কোন কিছু গোপনে বা প্রকাশ্যে চাওয়া। অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার নিকট বিনয়ের সহিত সকল কল্যাণের জন্য এবং সকল অপকার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করাই হলো দোয়া।
দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল বান্দাকে সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন। তিনি তাঁর বান্দার সকল দোয়াকে স্বাগত জানান। দোয়া সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, “দোয়া-ই ইবাদত” (তিরমিজি)
দোয়ার গুরুত্ব কি?
দোয়ার গুরুত্ব কি? দোয়া হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে এই দোয়া’র মাধ্যমে বান্দার বিশেষ যোগসূত্র তৈরি হয়। আল্লাহ’র প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস প্রকাশ পায়। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আস্থাশীলতা ও নির্ভরতা বান্দার অন্তরে দৃঢ়ভাবে স্থাপিত হয়।
একজন বান্দা তার সকল অহংকার দূর করে তার অবস্থান আল্লাহর কাছে তুলে ধরে। তাই বান্দার এই দোয়া মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই প্রিয়। দোয়ার মাধ্যমে একজন বান্দা তার কল্যাণ অর্জন করে আর সকল খারাপ বা অকল্যাণ বর্জন করতে পারে। আর এজন্যই দোয়া হলো সকল কল্যাণ ও বরকতের হাতিয়ার।
মহান আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বান্দাকে দোয়া করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে আমার বান্দারা! তোমরা আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।” (সূরাঃ আল-গাফের, আয়াতঃ ৬০)
তাই দোয়ার তাৎপর্য হলো ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সকল কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট শরণাপন্ন হওয়া। তাই আমাদের সকলের উচিত মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করা, বেশি বেশি দোয়া করা। আর তাই মোনাজাতের দোয়া কখনো ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কেননা, আখেরাতের সময় এই দোয়ায় বিশেষ সহায় হবে।
কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া - রাসূল (সাঃ) যে দোয়া সবচেয়ে বেশি করতেন
প্রিয় পাঠক, কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া ও রাসূল (সাঃ) যে দোয়া সবচেয়ে বেশি করতেন তা জানতে হলে এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া ও রাসূল (সাঃ) যে দোয়া সবচেয়ে বেশি করতেন তা নিচে আররি ও বাংলা উচ্চারণ সহকারে দেওয়া হলো।
মোনাজাত করার দোয়া আরবিঃ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
মোনাজতের দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াকিনা আজাবান্নার।” (সূরা বাকারাঃ আয়াতঃ ২০১)
বাংলা দোয়া ও মোনাজাত এর অর্থঃ “হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচান।”
প্রিয় পাঠক, পবিত্র কুরআন মাজীদে বর্ণিত এই দোয়াটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। এবং আমাদের প্রিয় নবী রাসূল (সাঃ যে দোয়া সবচেয়ে বেশি করতেন - তা হলো এই দোয়াটি। এই দোয়াটিকে powerful dua bangla বলা হয়।
ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া
ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া টি কি তা জানতে হলে অনলাইফ আইটি এর সাথেই থাকুন। আশা করি, অনেক কিছু জানতে পারবেন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে choto dua bangla, ছোট ছোট অনেক দোয়া আছে। এগুলো আমরা একটু সময় দিয়ে আমল করলেই অনেক নেকি বা কল্যাণ হাসিল করতে পারি।
ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া টিকে সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার দোয়া বা তওবার শ্রেষ্ঠ দোয়া বলা হয়। নিচে guruttopurno dua সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার দুআ টি দেওয়া হলো।
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার আরবিঃ للَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্কতানি, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত্বাতু। আউজুবিকা মিন শাররি মা-সানাতু। আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুউ বি জাম্বি, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
bangla dua - বাংলা মোনাজাত বা সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার এর অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! একমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি আমার স্রষ্টা এবং আমি আপনার দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি।
আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রই প্রার্থনা করছি। আমার উপর আপনার অনগ্রহ স্বীকার করছি এবং আমার সকল গুনাহ আমি স্বীকার করছি। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নেই।’
ঋণ মুক্তির দোয়া ও আমল
প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি জানতে পারবেন islamic dua bangla, ঋণ মুক্তির দোয়া ও আমল বা ঋণ মুক্তির দোয়া আরবি বা ঋণ পরিশোধের দোয়া বা ঋণ হতে মুক্তির দোয়া বা দ্রুত ঋণ মুক্তির দোয়া বা ঋণ মুক্তির জন্য দোয়া বা ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা ও ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবি। তাই এই দোয়াটি জানার জন্য অনলাইফ আইটি এর সাথেই থাকুন।
ঋণমুক্তির দোয়া সম্পর্কে হাদিসে আছে, হযজর মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “এই দোয়া পাঠ করলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন।” (তিরমিজি, বায়হাকি, মিশকাত, হাদিসঃ ২৪৪৯)
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিঃ اللَّهُمَّ اكْفِني بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ ، وَأغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِواكَ
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণ “আল্লাহুম্মাক ফিনি বিহালা-লিকা আন হারামিকা ওয়া আগিননি বিফাদিলকা আম্মান সিওয়াকা।”
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া বাংলা অর্থঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল (সম্পদ) দিয়ে যথেষ্ট করে দাও এবং তোমার অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষাহীন করো।”
ঋণ পরিশোধ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) কত সুন্দর উপদেশ দিয়ে বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে উত্তমরুপে ঋণ পরিশোধ করে।”
শুধু তাই নয়, রাসূল (সাঃ) সব সময় ভয়, চিন্তা ও পেরেশানির সাথে ঋণ থেকে মুক্তি চাইতেন। এবং ঋণগ্রস্থদের জন্য তিনি নিয়মিত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। এই প্রসঙ্গে হাদিসে আছে, হজরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) যখন অবতরণ করতেন, তখন তাঁর কাছ থেকে প্রায় এই দোয়া পড়তে শুনতামঃ
ঋণ হতে মুক্তির দোয়া আরবিঃ اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
ঋণ হতে মুক্তির দোয়া বাংলা উচ্চারণঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযাজি ওয়াল আঝযি ওয়াল কাসালি ওয়াল বুখলি ওয়াল ঝুবনি ওয়া দালায়িদ-দাইনি ওয়া গালাবাতির-রিঝালি।”
ঋণ হতে মুক্তির দোয়া বাংলা অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি দুঃশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে আশ্রয় চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আশ্রয় চাই, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার কাছে মুক্তি চাই।” (বুখারি)
তাই ঋণমুুক্তির জন্য মুমিন-বান্দার সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা উচিত। ঋণ পরিশোধের জন্য বান্দার ঋণ পরিশোধের দোয়া দোয়া করা উচিত। নামাজের মধ্যে দুই সেজদার মধ্যে উল্লেখিত দোয়া গুলো পড়া উচিত। তবেই মহান আল্লাহ তায়ালা উক্ত ঋণগ্রস্থ বান্দাকে ঋণ থেকে মুক্ত করবেন ইনশায়াল্লাহ।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আজকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল দোয়ার গুরুত্ব কি? কুরআনে বর্ণিত সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া কোনটি? রাসূল (সাঃ) এর প্রতিদিনের আমল, রাসূল (সাঃ) যে দোয়া সবচেয়ে বেশি করতেন, মোনাজতের দোয়া সমূহ, মুনাজাতের দোয়া সমূহ, গুনাহ মাফের দোয়া, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া, ঋণ মুক্তির দোয়া।
তাই আজকের এই আলোচনা পড়ে আশা করি, আপনি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন। আর আজকের এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন, যাতে অন্যেরাও পড়ে উপকৃত হতে পারে।
আর আজকের এই আলোচনার মধ্যে কোথাও যদি কোন ভুল করে থাকি, তাহলে তা সমালোচনা না করে দয়া করে তা সংশোধন করিয়ে দেবেন। এতক্ষুণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। (শওকত রাশেল)
ওয়ানলাইফ আইটিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url